ডেস্ক নিউজ ।। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুরনবী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবী জানিয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২ টায় ইউনিয়নের বাঁশতলীপাড়া এলাকায় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে মামলায় উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং মামলার বাদীর দাদা, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ও স্বামী বক্তব্য তুলে ধরেন।
তারা জানান, বাঁশতলীপাড়ার ওমর আলীর স্ত্রী লাভলী বেগম (৫২), মেয়ে নিশি (২৫) ও নিস্পি (২০) এবং ছোট ভাই আবু তাহেরের স্ত্রী খাদিজা (৩৩) দেহ ব্যবসায় জড়িত। ওমর আলীর বৃদ্ধ বাবাসহ নিশির স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুরী এবং এলাকাবাসী নিষেধ করলেও তারা বিরত না হয়ে উল্টো বেপরোয়াভাবে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল। এতে অনেক কিশোর যুবক এই খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি কয়েকজন নারীও তাদের খপ্পরে পড়েছে।
এমতাবস্থায় গত ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বহিরাগত এক লোক নিশির ঘরে ঢুকে। দীর্ঘ সময় পরেও লোকটা বের না হওয়ায় এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা বাড়িতে গিয়ে আগত লোকটার বিষয়ে জানতে চাইলে নিশির মা লাভলী বেগম বের হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এতে এলাকাবাসী চ্যালেঞ্জ করলে খাদিজা, নিস্পাও এসে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। চিল্লা পাল্লা শুনে আরও লোকজন ছুটে আসলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চোর, লুটেরা বলে চিৎকার এবং নিজেরাই ঘরের জিনিসপত্র ভেঙ্গে অরাজক পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এই সুযোগে নিশি আগন্তুকের সাথে সটকে পড়ে। সেকারণে লোকজন রাত ৩ টা পর্যন্ত পাহারা দেয় নিশির ফিরে আসার অপেক্ষায়। কিন্তু সে সারারাত ফেরেনি। জানা গেছে, রাতে সে ওই ব্যক্তির সাথে পার্বতীপুরে একটা ইটভাটায় ছিল। যা তার মাকে মোবাইলে নিশ্চিত করাও অডিও রেকর্ড আছে। অথচ ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার মেম্বার নুরনবী সরকারকে সহ তার দুই ভাইকে আসামি করে নিশি ধর্ষণ চেষ্টা, হামলা, লুট, ভাঙ্চুর ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং প্রাণ নাশের হুমকির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওমর ফারুকের বৃদ্ধ পিতা ও নিশির দাদা আব্দুর রহমান বলেন, আমার ছেলে একটা কুলাঙ্গার। তার বউ লাভলী একজন পতিতা। মা হয়ে মেয়ে দুটাকেও একই পাপে শামিল করেছে। এমনকি আমার ছোট ছেলের বউ খাদিজাকেও ওই পেশায় নামিয়েছে। তারা একাধিকবার ধরা পড়ে হাত পা ধরে ক্ষমা চেয়ে সুরাহা করে। সেকারণে আমার বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে মারধর করে। ঠিকমত খেতে দেয়না। এলাকাবাসীকে অভিযোগ দিলে গলা টিপে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, তাদের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। গত ৩ এপ্রিল রাতে এলাকাবাসী নিশিকে পাপকাজ করা অবস্থায় হাতে নাতে ধরেছে। তারপরও তারা গলাবাজি করায় লোকজন বাধ্য হয়েছে তাদের প্রতিহত করতে। এলাকার লোকজন যেন আমাকে রক্ষা করেছে। কারণ তাদের সহযোগিতায় আমার বাড়ি থেকে ওই পাপীদের তাড়িয়ে দিতে পেরেছি। এখানে মেম্বারের কোন সম্পৃক্ততা নাই। আমিই তাদের বিতারিত করেছি।
একইভাবে নিশির শ্বশুর একই ইউনিয়নের বটতলী বাজার এলাকার ইসাহাক আলী, শ্বাশুড়ি হাফিজা বেগম এবং স্বামী রেজা বলেন, বিয়ের পর থেকে নিশির চারিত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এলাকার সব ছেলেদের কাছে টাকা ধার নেয় এবং এই অজুহাতে ছেলেরা বাড়িতে যাতায়াত ও মেলামেশা শুরু করে। এক পর্যায়ে তার দেহ ব্যবসার বিষয়টা নিশ্চিত হই। নিষেধ করায় সে নানা অজুহাতে বাড়ির বাইরে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে হোটেল রিসোর্টে ওই পাপ করতে থাকে। এলাকার লোকজনের চোখে পড়ায় তারা প্রতিবাদ করলে বাবার বাড়িতে চলে এসেছে। এখানেও যে একই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ মায়ের কারণেই নিশি ও নিস্পা এপথে। শুধুমাত্র দুই সন্তানের জন্য নিশির সাথে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়নি। তবে এখন এতটা বেপরোয়া হওয়ায় আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। আর নিজেরা দুশ্চরিত্রা হয়ে একেবারে অন্যায়ভাবে মেম্বারের নামে অভিযোগ তুলেছে। যা সর্বৈব মিথ্যা।
এলাকার মৃত সামসুল হকের স্ত্রী গৃহিণী আছিয়া বেগম বলেন, ওমর আলীর স্ত্রী ও মেয়েদের পাপ কর্মের কারণে এলাকা নোংরা হয়ে গেছে। আশপাশের এলাকায় বাঁশতলীপাড়া বেশ্যাপাড়া হিসেবে পরিচিত হয়ে পড়েছে। এজন্য মেয়েদের বিয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা বার বার ধরা পড়েও শুধরায় না। বরং আরও বেপরোয়া হয় উঠেছে। বাধ্য হয়ে সেদিন গ্রাহকসহ হাতে নাতে ধরার পর তাদের স্বপরিবারে বিতাড়িত করেছে মুরব্বি আব্দুর রহমান। আর মিথ্যে নাটক সাজিয়ে উল্টো মেম্বারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই এবং পতিতা পরিবারের স্থায়ী অপসারণ চাই।

আরিফ ইসলাম সবুজসহ বেশ কয়েকজন যুবক বলেন, ওই পরিবারটা এতটাই নোংরা যে, তারা ওপেন সেক্স করাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়। অথচ সুস্থ সবল মানুষগুলো একটু খেটে কাজ করে খেতে পারে। আসলে ওমর আলীর স্ত্রী লাভলী বেগম ছিলেন চিহ্নিত পতিতা। তাকে বিয়ে করে এনে এলাকাটাকে পতিতালয় বানিয়ে ফেলেছে। মেয়ে নিশি ও নিস্পাকেও নষ্ট করেছে। তারা স্বামীর বাড়ি গিয়েও একই পাপকাজ করায় সেখানেও ধিকৃত হয়েছে। বিতারিত হয়ে এখানে এসে পুরো পরিবার বাঁশতলীপাড়াকেও বদনাম করে ফেলেছে। আমার সহপাঠী অনেকে তাদের খপ্পরে পড়ে বিপথগামী হয়েছে। তাই এই নষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচারের দাবি করছি।
তফেল মামুদের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, লাভলীর মতো নারীর জন্য গোটা সমাজই নষ্ট হয়ে যায়। লাভলী ও তার মেয়েদের জন্য আমরা নারী হয়ে চরম বিব্রত। এলাকার পরিচয় দিতে পারিনা। মেয়েদের জন্য বিয়ের সম্পর্ক আসলেও এলাকায় এসে বাইরের লোকজন ওই পরিবারের কারণে ফিরে যায়। আর তারাই কিনা নুরনবী মেম্বারের মত ভালো মানুষের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয় এবং মামলা করেছে। অথচ ঘটনার সময় মেম্বার ছিলনা। আমরা পাড়ার মহিলারা তার অপকর্ম ধরেছি। তারা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার বাইরে অবস্থান করে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর যোগসাজশে এমন ফাজলামি করছে। আমরা এই জঘন্য অপরাধে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার চাই।
ইউপি মেম্বার নুরনবী সরকার বলেন, আমি কখনোই কোন প্রকার অন্যায় ও অবৈধ কাজের সাথে জড়িত নই। তাছাড়া এমন জঘন্য কাজতো আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। আমার সাথে নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাজিত প্রতিপক্ষ সম্পূর্ণ ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমন ঘৃন্যতম কাজ করে চলেছে। সেকেন্দার ডাকাত নামে পরিচিত ওই ব্যক্তি নিজেই নানা অপকর্মে জড়িত। তার শেল্টারেই ওমর আলীর পরিবার জঘন্য কাজে লিপ্ত। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ পরিচয়ে তিনি ব্যাপক দাপট দেখিয়ে এমন অবৈধ কাজে নানাজনকে জড়িয়েছেন। দেহ ব্যবসায় শেল্টার দিয়ে কমিশন নিয়ে তা দিয়েই সংসয়ার চলে ওই ব্যক্তির। আমার বিরুদ্ধে হয়রানি মুলক মিথ্যে মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং প্রশাসনের কাছে ন্যায্য বিচার দাবী করছি।
উল্লেখ্য, ওমর আলীর মেয়ে নিশি গত ১৩ এপ্রিল নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে ইউপি মেম্বার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। যা তদন্তের জন্য সৈয়দপুর থানায় পাঠানো হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল নিশি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন মেম্বার পুলিশকে প্রভাবিত করে তদন্ত নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ওসি মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করছে।