প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে চাকরি স্থায়ীকরণ সহ পাঁচদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অস্থায়ী কর্মচারিরা। এতে খনির দাপ্তরিক কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
পাঁচ দফা দাবীতে কেন্দ্রীয় আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এই কর্মবিরতি পালন করছেন খনির আউটসোসিংয়ে মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮০ জন কর্মচারি।
আন্দোলনকারিদের পাঁচদফার মধ্যে রয়েছে, চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, ওভার টাইমসহ উৎসব বোনাস ও নৈমিত্তিক ছুটিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা।
আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বলেন, দির্ঘ ১৫ থেকে ২০বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে তারা সেবা দিয়ে আসছেন। একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে চাকরি করলেও স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার তারা। বেতনবৈষম্যের সাথে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, উৎসব ভাতা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত এই কর্মচারীরা।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপণ জারী করে আউটসোর্সিং কর্মচারিদের ওভার টাইম, উৎসব বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বাতিল করা হয়। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েন কয়লাখনির ২৮০ কর্মচারি। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আশার আলো জেগেছে কর্মচারিদের মাঝে।
কর্মচারীরা আরও বলেন, বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারি কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে ঢাকায় আন্দোলন করলে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৈষম্যবিবেচনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন শিথিল করে কাজে যোগ আন্দোলনকারিরা। কিন্তু ৬ মাসেও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আবারও আন্দোলনে নেমেছেন কর্মচারীরা। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারাও কর্মবিরতি পালন করছেন। দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ছানাউল্লাহ জানান, সারাদেশের আউটসোর্সিং কর্মচারিদের সাথে খনির ২৮০ কর্মচারীও কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে দাপ্তরিক কাজের কিছুটা বিঘœ ঘটছে, তবে কয়লা উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকারের সাথে তার দাপ্তারিক মুঠোফোনে ০১৩১৩ ৭০০৪৪০ একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। #
২।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাঁচদিন বন্ধের পর বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লাগাতার পাঁচদিন বন্ধের পর আবারো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১নং ইউনিট থেকে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১নং ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। যদিও ১নং ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে প্রতিদিন গড়ে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা ব্যবহার করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কয়লাভিত্তিক এই তাপবিদুৎ কেন্দ্রর তিনটি ইউনিটে মোট বিদুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগোওয়াট। এরমধ্যে ১ নং ও ২ নং ইউনিট মিলে মোট বিদুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২৫০ মেগোওয়াট। ৩ নং ইউনিটটি ২৭৫ মগোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সম্পন্ন।

এদিকে ২নং ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র সচল ছিল ১নং ও ৩নং ইউনিট। যা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রীডে যোগ হতো। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩নং ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছিল ১নং ইউনিটটি। সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সেই ১নং ইউনিটিরও বয়লারের পাইপ লিকেজ হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে পরদিন মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ১নং ইউনিটটিও বন্ধ করা হয়। এতে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই অচল হয়ে পড়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম। বিদুৎ কেন্দ্রটি পাঁচদিন পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ থাকার পর মেরামত শেষে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে উৎপাদন শুরু করা হয়েছে।
১নং ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর নিশ্চিত করে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ১নং ইউনিটের বয়লারের পাইপ লিকেজ হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ১নং ইউনিটটি বন্ধ করা হয়। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি)যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩নং ইউনিটটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যা এখনও বন্ধ রয়েছে। তবে ১নং ইউনিটের মেরামত শেষে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১নং ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। তবে ৩নং ইউনিটও চালুর জন্য প্রয়োজনীয় মেরাতম কাজ চলছে। দ্রুতই সেটিও চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। #