নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে ১৭টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এ প্রস্তাব জমা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
প্রস্তাবগুলো হল-
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানে নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠন করা।
২. জুলাই বিপ্লবে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা।
৩. নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো। সেক্ষেত্রে ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি ৮ বিভাগে ৮ জন নিয়োগ করা।
৪. নির্বাচন কমিশন গঠনের বর্তমান বিতর্কিত সার্চ কমিটির প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনে আইন প্রণয়ন করা। সার্চ কমিটি কমিশনের সদস্য সংখ্যার দ্বিগুণ নাম চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রচার ও গণগুশানির মাধ্যমে নাম চূড়ান্ত করবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি নামসমূহ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
৫. জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৪ বছর করা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষে ১০০ ও নিম্নকক্ষে আসন ৩০০ নির্ধারণ করা। নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চকক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের প্রাপ্তভোটে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণ করা।
৬. সংরক্ষিত আসন বাতিল করে সকল আসনে সরাসরি নির্বাচন। স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, মাফিয়াদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্ত করা।
৭. ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানসহ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্ত করা।
৮. নির্বাচনে কোন প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক, প্রার্থীর এজেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচন বিঘ্নিত হয় এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে ১০ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা। জেলা জজদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তিকরণ।
৯. রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার না করা এবং ভোট গ্রহণের অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন আগে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিকট প্রদান।
১০. প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য কমিশনারগণের নির্বাচনে কোন পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রমাণিত হলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা।
১১. নির্বাচনের কার্যক্রম সূচারুভাবে সম্পন্নকরণে নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র ক্যাডার (বিসিএস থেকে) ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ। নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শাস্তিপ্রাপ্ত কাউকে আদালতের অনুমতি ব্যতীত শাস্তি প্রত্যাহার না করা।
১২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করার পাশাপাশি এর নিরাপত্তা বিধানে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করা।
১৩. জাতীয় নির্বাচনের দিনসহ আগের ও পরেরদিন মিলিয়ে নির্বাচনের সময় ছুটি ৩ দিন করা।
১৪. নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রাপ্তিতে ন্যূনতম জেলা, উপজেলায় কার্যক্রম নেই এমন নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন বাতিল করা। রাজনীতিতে কালো টাকা, পেশি শক্তি হ্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ প্রদান। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা।
১৫. স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করে নির্দলীয় রাখা। জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া বন্ধ করা এবং শতকরা ৫০ শতাংশের নিচে ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন দেয়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিল উজ জামান এবং মানবাধিকার সম্পাদক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবনা কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট খালিদ হোসেন।