এপিএন ডেস্ক ।।মেক্সিকো এবং কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
বিশ্বে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থনৈতিক নীতির শক্তিশালী বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজরে নিজেদের আধিপত্য বৃদ্ধি করতে মূলত এই ঘোষণা।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যসমূহে তিনি এই শুল্ক প্রথম দিন থেকেই আরোপ করবেন। যতক্ষণ না অবৈধ অভিবাসন এবং মাদক পাচার বন্ধ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে এই শুল্ক আরোপ।
তিনি বলেন, ‘মেক্সিকো ও কানাডার হাতে দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা রয়েছে আর তাদের উচিত এটি সমাধান করা। যত দিন তারা এটির সমাধান করবে না, তত দিন তাদের এর বড় মূল্য দিতে হবে।’
এরপর ট্রাম্প আরও এক পোস্টে জানান, চীন যদি ফেন্টানাইল পাচার বন্ধ না করে, তা হলে তিনি চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
তবে নতুন শুল্কগুলো পূর্ববর্তী শুল্কের ওপর আরোপ করা হবে, নাকি নতুন করে নির্ধারিত হবে তা জানাননি ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারে চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি শুল্ক আরোপ করার কথা বলেছিলেন এবং মেক্সিকো থেকে আসা গাড়ির ওপর ১০০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তিনি দাবি করেছেন, ফেন্টানাইল পাচারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড থাকার পরও চীন তা কার্যকর করেনি। যার ফলে মেক্সিকোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার বেড়ে গেছে।
এই ঘোষণা পরপরই কানাডা এবং চীন থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
কানাডিয়ান ডলার, মেক্সিকান পেসো, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, কোরিয়ান ওয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান ডলার মার্কিন ডলারের তুলনায় কমে গেছে। এ ছাড়া, এশিয়ার প্রধান স্টক সূচকগুলোরও পতন দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকটি ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে।
কানাডার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বাণিজ্য ও সীমান্ত নিরাপত্তায় আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন, জাপান, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের তুলনায় বেশি পণ্য ক্রয় করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের চীন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেকোনো বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে কেউই জয়ী হবে না। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা পরস্পর লাভজনক।’
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তবে ট্রাম্প তার এই শুল্ক ঘোষণাকে একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। যা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বাণিজ্য চুক্তি করতে সহায়তা করবে এবং দেশের ভেতরে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।
কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন, এই শুল্কনীতি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনন্দিন পণ্যের মূল্য বাড়বে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমতে পারে। সূত্র- আল জাজিরা