দক্ষ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ “ডি এস” এর
সৈয়দপুর প্রতিনিধি (নীলফামারী)।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় অস্থায়ী ভিত্তিতে (টিএলআর) – ০৮ থেকে ১০ বছর ধরে কর্মরত দক্ষ ৩১৩ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে। এতে করে এই কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা থমকে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।ছাটাইকৃতরা। বাধ্য হয়ে আমরণ অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করেছে ওই শ্রমিকরা। গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপরে সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে ওই কর্মসূচি পালন করে তারা। তাদের অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে তাদের মতো দক্ষ শ্রমিকদের ছাটাই করে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুর।রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশদের পতন ও পরে স্বাধীন বাংলাদেশে মিলে দেড়শ বছরের দীর্ঘ সময়ে ক্রমান্বয়ে অবসরের পর কমতে থাকে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা। বর্তমানে কারখানাটিতে কর্মকর্তা ও।শ্রমিক-কর্মচারীর ২ হাজার ৮৫৯টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭১৬ জন। অর্থাৎ ২ হাজার ১৪৩ পদ শূন্য রয়েছে। এই জনবল-সংকটের কারণে কারখানায় ক্যারেজ মেরামতের প্রতিদিনের।লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন তিনটি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও হচ্ছে একটি কোচ। ২৯টি শপে ৭৪০টি যন্ত্র পরিচালনায় নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক। ফলে কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে ২০১৪ সালে ‘কাজ আছে, মজুরি আছে ভিত্তিতে অস্থায়ী ২ শ’ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। এতেও সংকুলান না হওয়ায় ২০২২ সালে আবারও একই নিয়মে ৩ শ’ শ্রমিক নেওয়া হয়। অভিযোগ।উঠেছে তাদের মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৩১৩ জনকে ছাটাই করে ২১০ জন অদক্ষ নতুন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাউন্ডারি শপের মোঃ মোনোয়ার হোসেন বলেন, আমার কাছে ইনচার্জ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করায় আমার আর্থিক ভালো না থাকায় ১ লক্ষ টাকা অনেক কষ্ট করে দিয়েছি। তারপরও চাকুরীর লিস্টে আমার নাম নাই। আমার থেকে যারা বেশি অংকের টাকা দিয়েছে এবং আমাদের থেকেও অদক্ষ তাদের লিস্টে নাম আছে ও চাকুরী হয়েছে। ক্যারেজ সপের ছাটাই হওয়া অস্থায়ী কর্মচারী মো. নাসির উদ্দীন নামের এক শ্রমিক বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এ কারখনায় কাজ করছি। নিজ দক্ষতায় কারিগর হয়েছিলাম। কিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি কারখানায় গিয়ে জানতে পারি চাকরি নেই। হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চাকুরি বিধি।অনুযায়ী নতুন কোথাও চাকুরিতে আবেদন করবো, সে বয়সও পেড়িয়ে গেছে। এখন কোথায় যাব? কি করবো? আর বাইরে কাজ করে কিভাবে সংসারে ৫ সদস্যের জীবিকা নির্বাহ করবো? অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া সিআইচআর সপের মো. নুর শামীম, রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ সপের মো.।নাসির উদ্দীন, ইয়ার্ড সপের এসএম তুষারুল আলম, পেইন্ট সপের আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুর রহমান নামের অস্থায়ী কর্মচারীরা বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতার সাথে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে কাজ করেছি। এখন চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হল। আবার কখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডাকবে? আর বৃদ্ধ মা-।বাবা, স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণের জোগানই বা দিব কিভাবে তা ভেবে পাচ্ছি না। চাকরি হারিয়ে সকল ছাটাই শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তদের অভিযোগ প্রতিটি।সপের ইনচার্জের মাধ্যমে, তাদের ছাটাই করে নতুন অদক্ষ লোকদের কাছ থেকে দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে বর্তমান (ডি এস) মোস্তফা জাকির হাসান অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করেন। তাদের দাবি পুরোনো সকল শ্রমিককে বহাল রাখতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর।আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে কারখানার একাধিক কর্মচারী জানান, তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি অর্থ দেনলেন হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান কারখানার অনেক ইনচার্জ অর্থ লেনদেন ও মালামাল চুরির কাজে জড়িত। এখন দক্ষদের ছাটাই করায় নতুনদের গড়ে তুলতে সময় লাগবে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত।কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে ৪ বছর শিক্ষানবিশকাল থাকবে। ফলে প্রশিক্ষনকালীন এই সময়ে রেলওয়ে কারখানায় কাজের গতি তেমন বাড়বে না। এতে উৎপাদন কমবে। যেখানে ৩০ টি আউট টার্ন হত। এখন সেখানে ৮ থেকে ১০ টি কোচ মেরামত হবে। তাই দেশের রেল ব্যবস্থাপনা সঠিক রাখতে অবশ্যই অস্থায়ী দক্ষ শ্রমিকদের ফেরাতে হবে। না হলে লোকসানে ধুঁকতে থাকা রেল সহজে দাঁড়াতে পারবেনা। এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান বলেন।বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
